থানার ওসি নিয়োগ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে চরম ক্ষোভ : হেডকোয়ার্টারের ৯ দফা নির্দেশনা
পুলিশ হেডকোয়ার্টার কর্তৃক ৯ দফা নির্দেশনা মেনে থানার অফিসার ইনচার্জ নিয়োগ করার জন্য পরিপত্র জারি করায় ক্ষুব্ধ হয়েছে মাঠপুলিশ। এ নির্দেশনা মেনে ওসি নিয়োগ করলে বিভাগীয় পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওসি নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার নির্দেশনায় পরিপত্র নিয়ে মাঠপুলিশে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন এ নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে দ্রুত আইজিপির সাথে সাক্ষাৎ করবে বলে জানিয়েছে। : পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পরিপত্র নং ১/২০১৫ থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পদায়নসংক্রান্ত পলিসি গ্রুপের সভায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে সকল ইউনিটে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, গত ৬ এপ্রিল পুলিশ হেডকোয়ার্টারে অনুষ্ঠিত পুলিশের পলিসি গ্রুপের সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক থানার অফিসার ইনচার্জ নিয়োগ বিষয়ে ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করা হলো। প্রথমত, অফিসার ইনচার্জ হিসেবে নিয়োগের জন্য পরিদর্শক পদে ন্যূনতম তিন বছর চাকরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পরিদর্শক হিসেবে দুই বা ততোধিক এবং সমগ্র চাকরিকালে ৪ বা ততোধিক গুরুদ থাকলে ওসি হিসেবে পদায়ন করা যাবে না। তৃতীয়ত, আর্থিক অনিয়ম বা নৈতিক স্খলনজনিত ১টি গুরুদ থাকলেও ওসি হিসেবে পদায়ন করা যাবে না। চতুর্থত, থানায় পদায়নকৃত দুজন পরিদর্শকের মধ্যে সিনিয়রকে অফিসার ইনচার্জ নিয়োগ করতে হবে। পঞ্চমত, একই থানায় দুবার অফিসার ইনচার্জ নিয়োগ করা যাবে না। ষষ্ঠত, বয়স ৫৪ বছর অথবা ওসি হিসেবে ১২ বছর দায়িত্ব পালন করে থাকলে (যেটা আগে আসে) থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা যাবে না। সদাচরণ, গণমুখী ও কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমে উৎসাহী পুলিশ পরিদর্শকদের ওসি পদায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অষ্টমত, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে উক্ত আদেশের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হবে এবং ভবিষ্যতে আরআই প্যানেলের মতো অফিসার ইনচার্জ পদায়নের লক্ষ্যে প্যানেল প্রস্তুত করা হবে। ওসি নিয়োগের উপরোক্ত নির্দেশনা পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মাঠপুলিশ। পুলিশ কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা মনে করেন, এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করলে তারা সবাই কম-বেশি ওসির দায়িত্বপালন থেকে বঞ্চিত হবেন। বিভাগীয় শৃংখলার কারণে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, কোনোভাবেই এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না। এ জন্য পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক ডাকা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে দাবিনামা জানানো হবে। বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম দিনকালকে জানান, ‘অফিসার ইনচার্জ নিয়োগে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশনায় সারাদেশ থেকেই পুলিশ সদস্যরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আমরা দ্রুত অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক করে আইজিপিকে অবহিত করব।’ : পুলিশ সদস্যরা জানান, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বর্তমানে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮০৯ জনের মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৩৩৩ জন ক্যাডার কর্মকর্তা। বাকি ১ লাখ ৫৩ হাজর ৫৭৩ জন ননক্যাডার। তন্মধ্যে ২ হাজার ৭৯০ জন নিরস্ত্র পরিদর্শক। আর বাকি প্রায় দেড় লাখই এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল। কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হওয়ার পর অনেকেরই বয়স ৫৪ পাড় হয়ে যায়। এ নির্দেশনা কার্যকর হলে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কারো পক্ষে জীবনে একবারও অফিসার ইনচার্জ হিসেবে নিয়োগলাভের সুযোগ থাকবে না। বিসিএস ক্যাডারে যোগদান করার পরই সিনিয়র তদারকি অফিসার হিসেবে সার্কেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সর্বোপরি পুলিশ সুপারদের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা থাকায় তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অধস্তনদের গণহারে শাস্তি দিয়ে থাকেন। ক্যাডার ও ননক্যাডার বৈষম্যের কারণে তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব কাজ করায় অনেক ক্ষেত্রেই দন্ডের যথার্থতা যাচাই না করে প্রতিহিংসামূলক বা রাজনৈতিক কারণে হয়ে থাকে। পরিদর্শক থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি থাকলেও বিভাগীয় দন্ডের কারণে বিভাগীয় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায় না। ফলে বিসিএস কর্মকর্তারা ওই পদগুলোতে পদোন্নতি ও পদায়নের সুযোগ নেন। দন্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ যথার্থতা যাচাই না করে অফিসার ইনচার্জ নিয়োগে দন্ডকে শর্ত করায় পদোন্নতি পাওয়ার মতো বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা ওসি নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
SOURCE: DAINIK DINKAL